23 Nov 2024, 01:41 pm

সুইডেনে কোরআন অবমাননার প্রতিবাদে নতুন রাষ্ট্রদূত পাঠাবে না ইরান

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : সুইডেনে পবিত্র কোরআন অবমাননার প্রতিবাদে সেই দেশে নতুন রাষ্ট্রদূত পাঠাবে না ইরান। সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমের একটি মসজিদের বাইরে এক বিক্ষোভকারী কোরআন পুড়িয়ে দেওয়ার জেরে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তেহরান।

একইসঙ্গে এই ধরনের বিক্ষোভের অনুমতি দেওয়ার জন্য সুইডিশ সরকারকে অভিযুক্তও করেছে ইরান। রবিবার (২ জুলাই) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানী স্টকহোমের একটি মসজিদের বাইরে এক বিক্ষোভকারী পবিত্র কোরআন পুড়িয়ে দেওয়ার পর সুইডেনে নতুন রাষ্ট্রদূত পাঠাতে অস্বীকার করেছে ইরান সরকার। কয়েকদিন আগে ঈদুল আজহার দিনে সুইডেনে মসজিদের বাইরে মুসলমানদের পবিত্র গ্রন্থ পুড়িয়ে দেয় ইরাকি বংশোদ্ভূত এক শরণার্থী।

বিবিসি বলছে, সুইডিশ পুলিশ গত সপ্তাহে অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে জাতিগত বা জাতীয় গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলনের অভিযোগ এনেছে। এছাড়া ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান অভিযুক্ত ব্যক্তিকে প্রতিবাদের অনুমতি দেওয়ার জন্য সরকারকে দায়ী করেছেন।

পবিত্র কোরআনের কপি পোড়ানোর পরিকল্পনা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সুইডেনে দাঙ্গার জন্ম দিয়েছে। পুলিশ সম্প্রতি একই ধরনের প্রতিবাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করলেও পরে আদালত রায় দেয় যে, তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার ভিত্তিতে অনুমতি দেওয়া উচিত।

সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে কোরআন অত্যন্ত পবিত্র এবং ধর্মীয় এই গ্রন্থের প্রতি ইচ্ছাকৃত ক্ষতি বা অসম্মান প্রদর্শনকে গভীরভাবে আপত্তিকর বলে বিবেচনা করা হয়। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান বলেছেন, সুইডেনের জন্য নতুন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করা সত্ত্বেও তেহরান দেশটিতে তাদের পাঠাবে না।

তিনি টুইটারে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘সুইডিশ সরকার পবিত্র কোরআনকে অবমাননা করার অনুমতি দেওয়ার কারণে নতুন রাষ্ট্রদূত পাঠানোর প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়েছে।’

অন্যদিকে সুইডেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে কোরআন পোড়ানো ব্যক্তিকে ইরাকের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ইরাকি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইরাকি এই মন্ত্রণালয়ের দাবি, যেহেতু ওই ব্যক্তি এখনও ইরাকি নাগরিকত্ব ধারণ করছেন, তাই তাকে বাগদাদে বিচারের মুখোমুখি হওয়া উচিত।

বিবিসি বলছে, কোরআন অবমাননার ঘটনার পর হাজার হাজার ইরাকি বিক্ষোভকারী শিয়া ধর্মগুরু মোকতাহা আল-সদরের প্ররোচনায় ইরাকের সুইডিশ দূতাবাসে হামলা চালায়। অবশ্য নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হলে পনের মিনিট পর তারা সেখান থেকে চলে যায়।

সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসন দূতাবাসে হামলার নিন্দা করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, নিজেদের পরিচয় সম্পর্কে চিন্তা করার সময় এসেছে সুইডেনের।

এর আগে সুইডেনে উগ্র কট্টরপন্থি সমর্থকদের ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় নিন্দা জানায় সুইডিশ সরকার। একইসঙ্গে এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে ইসলামবিদ্বেষ বা মুসলিম-বিরোধী মনোভাব বলেও অভিহিত করেছে দেশটি।

সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, সুইডেনের সরকার স্টকহোমের প্রধান মসজিদের বাইরে পবিত্র কোরআন পোড়ানোর নিন্দা করেছে এবং এটিকে ‘ইসলামোফোবিক’ বা ইসলামবিদ্বেষ মূলক কাজ বলে অভিহিত করেছে। আন্তর্জাতিক ইসলামি সংস্থা মুসলমানদের পবিত্র গ্রন্থের ভবিষ্যত অবমাননা এড়াতে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানোর পরে সুইডিশ সরকার এই মন্তব্য করল।

সুইডেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রবিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘সুইডেনের সরকার পুরোপুরি বোঝে যে, সুইডেনে বিক্ষোভের নামে কিছু ব্যক্তির সংঘটিত ইসলামফোবিক কর্মকাণ্ড মুসলমানদের জন্য আক্রমণাত্মক হতে পারে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘আমরা এই কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করি এবং এসব কাজ কোনোভাবেই সুইডিশ সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে না।’

ভবিষ্যতে পবিত্র কোরআনের অবমাননা এড়াতে মুসলিম দেশগুলোর জোট অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) থেকে সম্মিলিত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বানের পর সুইডিশ সরকারের পক্ষ থেকে এই নিন্দা করা হয়।

উল্লেখ্য, গত বুধবার সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমের কেন্দ্রীয় মসজিদের বাইরে দুই ব্যক্তি আগে থেকে ঘোষণা দিয়ে পবিত্র কুরআনের একটি কপিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তাদেকে এই ন্যক্কারজনক কাজ করার অনুমতি দেয় একটি সুইডিশ আদালত। কুরআন অবমাননা করার জন্য ওই ইসলাম বিদ্বেষী ব্যক্তিরা পবিত্র ঈদুল আজহার দিনটিকে বেছে নেয়।

ওই ঘটনার জেরে প্রতিক্রিয়া জানাতে ৫৭-সদস্য দেশের সংস্থা ওআইসি জেদ্দা সদর দপ্তরে বৈঠকে বসে এবং ভবিষ্যতে পবিত্র কোরআনের অবমাননা এড়ানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানায়।

বৈঠকের পরে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, পবিত্র ‘কোরআনের অবমাননা করার ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ওআইসি তার সদস্য দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ ও সম্মিলিত ব্যবস্থা গ্রহণ করার’ আহ্বান জানিয়েছে।

পরে সুইডিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ‘কোরআন বা অন্য কোনো পবিত্র গ্রন্থ পোড়ানো খুবই আপত্তিকর ও অসম্মানজনক কাজ এবং স্পষ্ট উস্কানি। বর্ণবাদ, জেনোফোবিয়া এবং এই ধরনের অসহিষ্ণুতার কোনো স্থান সুইডেন বা ইউরোপে নেই।’

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 9312
  • Total Visits: 1277737
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২০শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, দুপুর ১:৪১

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018